ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ , ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বানারীপাড়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ব্র্যাকের “ভাসমান শিক্ষা তরী”

বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট সময় : ২০২৫-০৩-২৩ ১৬:৩৩:২৮
বানারীপাড়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ব্র্যাকের “ভাসমান শিক্ষা তরী” বানারীপাড়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ব্র্যাকের “ভাসমান শিক্ষা তরী”




রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ বিশারকান্দি ইউনিয়নে সন্ধ্যা নদীর শাখা নদীতে ভাসছে ব্র্যাকের শিক্ষা তরী। ওই ইউনিয়নের চৌমোহনা বাজারের অদূরে নোঙর করা ভাসমান স্টিলবডির কয়েকটি নৌকা।

নৌকার ভেতর স্কুল, নানা উপকরণ দিয়ে সাজানো এসব তরী। পাঠদানের পাশাপাশি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আনন্দ-বিনোদনের মধ্যে লেখাপড়া। সম্পূর্ণ বিনা খরচে যতœ সহকারে কোমলমতি শিশুদের পড়ানো হয়। ফ্রি দেওয়া হয় বই, খাতা ও কলমসহ নানা শিক্ষা উপকরণ। ব্র্যাকের শিক্ষাতরীতে শিক্ষার এমন পরিবেশে পড়াশোনা করতে কার মন না চায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত, মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্র্যাকের এই শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। শিশুদের উপযোগী নানা শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাজানো প্রতিটি তরী। তরীগুলো মনে হয় এ যেন এক একটি সাজানো বিদ্যালয়। শিক্ষাতরীতে শিক্ষার্থীদের জন্য আছে টয়লেটের সুব্যবস্থা। স্টিলবডির তরীতে রয়েছে বোট রিং। যাতে শিশুরা পানিতে পড়ে গেলে এটা ধরে জীবন রক্ষা করতে পারে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সহজ উপকরণের মাধ্যমে গণিত, বিজ্ঞান, মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার শিখতে পারে এসব তরীতে। প্রতিটি নৌকায় একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে একত্রে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারে। রমজান মাসে স্কুল বন্ধ থাকায় ব্র্যাকের এ ভাসমান শিক্ষা তরীতে প্রতিদিন সকালে ২ ঘন্টা করে নানা বিষয় শিখতে পারছে নদীর তীরবর্তী ওই এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

 জানা গেছে, দেশের হাওর,দ্বীপ,চর ও দুর্গম এলাকায় এসব ভাসমান শিক্ষা তরীতে ১০ থেকে ১৪ দিনব্যাপী শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত হয়। হাওরাঞ্চলে পর্যাপ্ত স্কুল না থাকার কারণে বর্ষা মৌসুমে ছোট নৌকায় হাওর পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকরা ভয় পান। এছাড়াও রয়েছে নানান সমস্যার কারণে হতদরিদ্র, দিনমজুর ও অসহায় পরিবারের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়া। ব্র্যাকের ভাসমান শিক্ষাতরীতে শিক্ষার সুফল পেয়েছে হাওরাঞ্চলে হতদরিদ্র শিশুরা। মূলত ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে চালু হয়েছিল নৌকায় এ শিক্ষাতরী। এই শিক্ষাকর্যক্রম পূর্বে (২০১১-১৮) পর্যন্ত বাহিরের দেশের অর্থায়নে চললেও এখন ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়নে চলমান। বানারীপাড়ায় ভাসমান এ শিক্ষা তরী নতুন এক অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা ভাসমান তরীতে ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা নিতে পেরে দারুন উচ্ছ্বসিত।

শিক্ষার্থীরা জানায়, নৌকায় শিক্ষা গ্রহণ তাদের খুব ভাল লাগে। শিক্ষা সামগ্রী পেয়েও তারা খুশি। এদিকে অভিভাবকরাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখে তাদের সন্তানদের উৎসাহ নিয়ে ভাসমান এ শিক্ষা তরীতে পাঠাচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার মাও যাচ্ছেন। বেশ কিছুদিন ধরে ভাসমান এ শিক্ষা তরী উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আরও কয়েকদিন এখানে থাকার পরে নদীর তীরবর্তী অন্য কোন এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ভাসমান এ শিক্ষা তরী নোঙর করবে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে ভাসমান স্কুলের এ ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা কার্যক্রম। যা ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগের পাশে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ব্র্যাকের এ শিক্ষা তরী।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মো. সোহেল রানা জানান, নদীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের শিক্ষার্থীদের স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের বিশেষ পদ্ধতিতে শিখন শেখানো হয়। পরে ভাসমান তরী আবার অন্য কোন স্থানে নোঙর করে। এভাবেই বছরব্যাপী শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে মানবিক সংগঠন ব্র্যাক।





 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ